23
পীলাত ও হেরোদের দরবারে যীশু
1 তখন সকলে দল বেঁধে উঠে তাঁকে পীলাতের কাছে নিয়ে গেল।
2 তারা যীশুকে অভিযুক্ত করে বলল, “আমরা দেখেছি, এই লোকটি আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। সে কৈসরকে কর দিতে নিষেধ করে, আর নিজেকে খ্রীষ্ট, একজন রাজা বলে দাবি করে।”
3 পীলাত তাই যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ইহুদিদের রাজা?”
যীশু উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, ঠিক তাই, যেমন তুমি বললে।”
4 পীলাত তখন প্রধান যাজকবর্গ ও লোকদের কাছে ঘোষণা করলেন, “এই মানুষটিকে অভিযুক্ত করার মতো কোনো দোষ আমি খুঁজে পেলাম না।”
5 কিন্তু তারা জোর দিয়ে বলল, “ও তার শিক্ষায় সমগ্র যিহূদিয়ার লোকদের উত্তেজিত করে তুলেছে। গালীল থেকে শুরু করে ও এখানেও এসে পৌঁছেছে।”
6 একথা শুনে পীলাত জানতে চাইলেন, লোকটি গালীলীয় কি না।
7 তিনি যখন জানতে পারলেন যে, যীশু হেরোদের শাসনাধীন, তিনি তাঁকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সময় হেরোদও জেরুশালেমে ছিলেন।
8 যীশুকে দেখে হেরোদ অত্যন্ত খুশি হলেন, কারণ দীর্ঘকাল যাবৎ তিনি তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। তিনি যীশুর সম্পর্কে যা শুনেছিলেন, সেইমতো আশা করছিলেন, তাঁকে কোনো অলৌকিক চিহ্নকাজ করতে দেখবেন।
9 তিনি তাঁকে বহু প্রশ্ন করলেন, কিন্তু যীশু তাঁকে কোনও উত্তর দিলেন না।
10 প্রধান যাজকবৃন্দ ও শাস্ত্রবিদরা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ডভাবে তাঁর বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে লাগল।
11 তখন হেরোদ ও তাঁর সেনারা তাঁকে তুচ্ছ ও ব্যঙ্গবিদ্রুপ করলেন। এক জমকালো পোশাক পরিয়ে যীশুকে তারা পীলাতের কাছে ফেরত পাঠালেন।
12 সেদিন হেরোদ ও পীলাত বন্ধু হয়ে উঠলেন; কারণ এর আগে তাঁরা পরস্পরের শত্রু ছিলেন।
13 পীলাত প্রধান যাজকদের, সমাজভবনের অধ্যক্ষদের ও জনসাধারণকে একসঙ্গে ডেকে তাদের বললেন,
14 “বিদ্রোহের জন্য লোকদের উত্তেজিত করার অভিযোগে তোমরা এই লোকটিকে আমার কাছে নিয়ে এসেছ। তোমাদের সাক্ষাতে আমি তাকে পরীক্ষা করেছি, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি আমি খুঁজে পাইনি।
15 আর হেরোদও কোনো দোষ পাননি, কারণ তিনি তাঁকে আমার কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। তোমরা দেখতেই পাচ্ছ, মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোনো অপরাধই সে করেনি।
16 তাই, আমি তাকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।”
17 সেই পর্বের সময়ে একজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার প্রথা ছিল।
18 কিন্তু তারা সকলে চিৎকার করে উঠল, “এই লোকটিকে দূর করুন। আমরা বারাব্বার মুক্তি চাই।”
19 (নগরে বিদ্রোহের চেষ্টা ও হত্যার অপরাধে বারাব্বাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল।)
20 যীশুকে মুক্ত করার অভিপ্রায়ে পীলাত তাদের কাছে আবার অনুরোধ করলেন।
21 কিন্তু তারা চিৎকার করতে লাগল, “ওকে ক্রুশে দিন! ওকে ক্রুশে দিন!”
22 তিনি তৃতীয়বার তাদের কাছে বললেন, “কেন? এই মানুষটি কী অপরাধ করেছে? মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো কোনো কারণই আমি এর মধ্যে খুঁজে পাইনি। সেইজন্য আমি ওকে শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দেব।”
23 কিন্তু তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করার অনড় দাবিতে তারা উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তাদের চিৎকারেরই জয় হল।
24 তাই পীলাত তাদের দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
25 বিদ্রোহ ও হত্যার অভিযোগে যে লোকটি কারাগারে বন্দি ছিল ও যাকে তারা চেয়েছিল, তিনি তাকে মুক্তি দিলেন এবং তাদের ইচ্ছার কাছে তিনি যীশুকে সমর্পণ করলেন।
যীশুকে ক্রুশার্পিত করা হল
26 যীশুকে নিয়ে এগিয়ে চলার পথে কুরীণের অধিবাসী শিমোনকে তারা ধরল। সে গ্রাম থেকে শহরে আসছিল। তারা ক্রুশটি তার উপরে চাপিয়ে দিয়ে যীশুর পিছন পিছন সেটি বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।
27 বিস্তর লোক তাঁকে অনুসরণ করছিল। সেই সঙ্গে ছিল অনেক নারী, যারা তাঁর জন্য শোক ও বিলাপ করছিল।
28 যীশু ফিরে তাদের উদ্দেশে বললেন, “ওগো জেরুশালেমের কন্যারা, আমার জন্য তোমরা কেঁদো না, কিন্তু নিজেদের জন্য ও তোমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কাঁদো।
29 কারণ এমন সময় আসবে, যখন তোমরা বলবে, ‘ধন্য সেই বন্ধ্যা নারীরা, যাদের গর্ভ কোনোদিন সন্তানধারণ করেনি, যারা কোনোদিন বুকের দুধ পান করায়নি।’
30 তখন
“ ‘তারা পর্বতসকলের উদ্দেশে বলবে, “আমাদের উপরে পতিত হও!”
আর পাহাড়গুলিকে বলবে, “আমাদের ঢেকে ফেলো!” ’
31 গাছ সতেজ থাকার সময়ই মানুষ যদি এরকম আচরণ করে, তাহলে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে, তখন আরও কি না ঘটবে!”
32 আরও দুজন দুষ্কৃতীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
33 মাথার খুলি নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে তারা তাঁকে সেই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ করল, একজনকে তাঁর ডানদিকে, অন্যজনকে তাঁর বাঁদিকে।
34 তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা জানে না, এরা কী করছে।” আর গুটিকাপাত করে তারা তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল।
35 লোকেরা দাঁড়িয়ে সবকিছু লক্ষ্য করছিল। এমনকি, সমাজভবনের অধ্যক্ষরাও তাঁকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করল। তারা বলল, “ও অন্যদের বাঁচাত; ও যদি ঈশ্বরের সেই খ্রীষ্ট, সেই মনোনীত জন হয়, তাহলে এখন নিজেকে বাঁচাক!”
36 সৈন্যেরাও উঠে এসে তাঁকে বিদ্রুপ করল। তারা তাঁকে সিরকা দিয়ে বলল,
37 “তুমি যদি ইহুদিদের রাজা হও, তাহলে নিজেকে বাঁচাও।”
38 তাঁর মাথার উপরে একটি লিখিত বিজ্ঞপ্তি ছিল। তাতে লেখা ছিল,
“এই ব্যক্তি ইহুদিদের রাজা।”
39 ক্রুশার্পিত দুষ্কৃতীদের একজন তাঁকে কটূক্তি করে বলল, “তুমিই কি সেই খ্রীষ্ট নও? নিজেকে আর আমাদের বাঁচাও!”
40 কিন্তু অপর দুষ্কৃতী তাকে তিরস্কার করে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় করো না? তুমিও তো সেই একই দণ্ডভোগ করছ।
41 আমরা ন্যায়সংগত দণ্ডভোগ করছি, আমরা যা করেছি, তারই সমুচিত ফলভোগ করছি। কিন্তু এই মানুষটি কোনও অন্যায় করেননি।”
42 তারপর সে বলল, “যীশু, আপনি যখন নিজের রাজ্যে আসবেন, তখন আমাকে স্মরণ করবেন।”
43 যীশু তাকে উত্তর দিলেন, “আমি তোমাকে সত্যিই বলছি, আজই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে।”
যীশুর মৃত্যু
44 তখন দুপুর প্রায় বারোটা। সেই সময় থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশের উপরে অন্ধকার ছেয়ে রইল।
45 সূর্যের আলো নিভে গেল। আর মন্দিরের পর্দাটি চিরে দু-টুকরো হল।
46 যীশু উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলেন, “পিতা, তোমার হাতে আমি আমার আত্মা সমর্পণ করি।” একথা বলে তিনি তাঁর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।
47 এই সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শত-সেনাপতি ঈশ্বরের প্রশংসা করে বললেন, “এই মানুষটি নিঃসন্দেহে ধার্মিক ছিলেন।”
48 এই দৃশ্য দেখার জন্য যারা সমবেত হয়েছিল, তারা তা দেখে বুকে আঘাত করতে করতে ফিরে গেল।
49 কিন্তু তাঁর পরিচিতজনেরা এবং গালীলের যে মহিলারা তাঁকে অনুসরণ করছিলেন, তাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত ঘটনা লক্ষ্য করলেন।
যীশুর সমাধি
50 এখন যোষেফ নামে মহাসভার এক সদস্য সেখানে ছিলেন। তিনি ছিলেন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ।
51 তিনি তাদের সিদ্ধান্তে ও কাজকর্মে সহমত ছিলেন না। তিনি ছিলেন যিহূদিয়ার আরিমাথিয়া নগরের অধিবাসী। তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলেন।
52 তিনি পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর দেহটি চেয়ে নিলেন।
53 তিনি তাঁর দেহটি ক্রুশ থেকে নামিয়ে একখণ্ড লিনেন কাপড়ে জড়িয়ে, পাহাড় কেটে তৈরি করা একটি সমাধিতে রাখলেন। আগে কখনও কাউকে সেখানে সমাধি দেওয়া হয়নি।
54 সেদিনটি ছিল প্রস্তুতির দিন, বিশ্রামদিন শুরু হতে অল্প কিছুক্ষণ বাকি ছিল।
55 গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে আগত মহিলারা যোষেফকে অনুসরণ করে সমাধি স্থানটি ও কীভাবে তাঁর দেহটি রাখা হল, তা দেখলেন।
56 তারপর তাঁরা বাড়ি ফিরে বিভিন্ন রকম মশলা ও সুগন্ধিদ্রব্য প্রস্তুত করলেন। কিন্তু বিধানের প্রতি বাধ্য হয়ে তাঁরা বিশ্রামদিনে বিশ্রাম করলেন।