14
যীশুর শেষ দুঃখভোগ ও মৃত্যু। 
 
1 উদ্ধারপর্ব ও তাড়ীশূন্য রুটি র পর্বের মাত্র দুই দিন বাকি; তখন প্রধান যাজকেরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা গোপনে যীশুকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিলেন।   
2 কারণ তারা বলল, পর্বের দিনের নয়, কারণ লোকদের ভেতরে গোলমাল হতে পারে।   
যীশুর অভিষেক। 
 
3 যীশু তখন বৈথনিয়ায় শিমোনের বাড়িতে ছিলেন, তখন একটি মহিলা শ্বেত পাথরের পাত্রে খুব মূল্যবান এবং খাঁটি সুগন্ধি তেল নিয়ে তাঁর কাছে এলো এবং তিনি খেতে বসলে পাত্রটি ভেঙে সে তাঁর মাথায় সেই তেল ঢেলে দিল।   
4 সেখানে যারা হাজির ছিল তাদের ভেতরে কয়েক জন বিরক্ত হয়ে একে অপরকে বলতে লাগলো এই ভাবে আতরটা নষ্ট করা হল কেন?   
5 এই আতরটা বিক্রি করলে তিনশো দিন দিনারিও বেশি পাওয়া যেত এবং তা গরিবদের দেওয়া যেত। আর এই বলে তারা সেই মহিলাটিকে বকাবকি করতে লাগলো।   
6 তখন যীশু বললেন “থাম, এই মহিলাটিকে কেন দুঃখ দিচ্ছ? এ তো আমার জন্য ভালো কাজ করল।”   
7 কারণ দরিদ্ররা তোমাদের কাছে সব দিনই আছে; যখন ইচ্ছা তখনই তাদের উপকার করতে পার; কিন্তু আমাকে তোমরা সবদিন পাবে না।   
8 এ যা পেরেছে তাই করেছে, আমাকে কবরের জন্য প্রস্তুত করতে আগেই আমার দেহের উপর আতর মাখিয়ে দিয়েছে।   
9 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, “সমস্ত জগতে যে কোন জায়গায় এই সুসমাচার প্রচারিত হবে, সেই জায়গায় এর এই কাজের কথাও একে মনে রাখার জন্য বলা হবে।”   
10 এর পরে ইস্করোতীয় যিহূদা নামে, সেই বারো জন শিষ্যের ভেতরে একজন যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য, প্রধান যাজকদের কাছে গেল।   
11 তাঁরা যিহূদার কথা শুনে খুশী হলেন এবং তাকে টাকা দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন; তখন সে যীশুকে ধরিয়ে দেবার জন্য সুযোগে খুঁজতে লাগলো।   
নিস্তারপর্ব্ব পালন ও প্রভুর ভোজ স্থাপন। 
 
12 তাড়ীশূন্য রুটি র পর্বের প্রথম দিনের, নিস্তারপর্ব্বের ভেড়ার বাচ্চা বলি দেওয়া হতো, সেই দিন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “আপনার জন্য আমরা কোথায় নিস্তারপর্ব্বের ভোজ প্রস্তুত করব? আপনার ইচ্ছা কি?”   
13 তখন যীশু তাঁর দুই জন শিষ্যকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, তোমরা নগরে যাও, সেখানে এমন একজন লোকের দেখা পাবে, যে একটা কলসিতে করে জল নিয়ে যাচ্ছে; তোমরা তার পেছনে পেছনে যেও;   
14 সে যে বাড়িতে ঢুকবে, সেই বাড়ির মালিককে বোলো, গুরু বলেছেন, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্ব্বের ভোজ খেতে পারি, আমার সেই অতিথিশালা কোথায়?   
15 তাতে সে লোকটি তোমাদেরকে ওপরের একটি সাজানো বড় ঘর দেখিয়ে দেবে, সেই জায়গায় আমাদের জন্য তৈরী করো।   
16 পরে শিষ্যরা শহরে ফিরে গেলেন, আর তিনি যেরকম বলেছিলেন, সেরকম দেখতে পেলেন; পরে তাঁরা নিস্তারপর্ব্বের ভোজ তৈরী করলেন।   
17 পরে সন্ধ্যা হলে যীশু সেই বারো জন শিষ্যকে নিয়ে সেখানে এলেন।   
18 তাঁরা বসে ভোজন করছেন, সেই দিনে যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে এক জন আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। সে আমার সঙ্গে ভোজন করছে।”   
19 তখন শিষ্যরা দুঃখ পেলো এবং একে একে যীশুকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, আমি কি সেই লোক?   
20 যীশু তাদেরকে বললেন, এই বারো জনের ভেতরে একজন, যে আমার সঙ্গে এখন ভোজন করছে।   
21 কারণ মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে যেমন লেখা আছে, তেমনি তিনি যাবেন, কিন্তু ধিক সেই ব্যক্তিকে, যার মাধ্যমে মনুষ্যপুত্রকে ধরিয়ে দাও য়া হবে, সেই মানুষের জন্ম না হলেই তার পক্ষে ভাল ছিল।   
22 যখন তাঁরা খাবার খাচ্ছেন, এমন দিনের যীশু রুটী নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে ভাঙলেন এবং শিষ্যদের দিলেন, আর বললেন, “এটা নাও, এটা আমার শরীর।”   
23 খাওয়ার পরে যীশু পানপাত্র নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের দিলেন এবং তারা সকলেই তা থেকে পান করলো।   
24 যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, এটা আমার রক্ত, নতুন নিয়মের রক্ত, যা অনেকের জন্য ঢেলে দেওয়া হলো, এই দিয়ে মানুষের সঙ্গে ঈশ্বরের নতুন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হল।   
25 আমি তোমাদের সত্য বলছি, “যত দিন না আমি আমার পিতার রাজ্যে প্রবেশ করি ও তোমাদের সাথে নতুন আঙুরের রস পান না করি। সেই দিন পর্যন্ত আমি আঙুর ফলের রস আর কখনও পান করব না।”   
26 এর পরে তাঁরা একটা গান করে, তাঁরা জৈতুন পর্বতে চলে গেলেন।   
পিতরের অস্বীকার সম্পর্কে যীশুর ভবিষ্যৎবাণী। 
 
27 যীশু তাদেরকে বললেন, তোমরা সকলে আমাকে ছেড়ে পালাবে; শাস্ত্রে এরকম লেখা আছে,   
“আমি মেষ পালককে আঘাত করব,   
তাতে মেষেরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে।”   
28 কিন্তু আমি মৃত্যু থেকে জীবিত হবার পরে আমি তোমাদের আগে গালীলে যাব।   
29 পিতর তাঁকে বলল, যদি সবাই আপনাকে ছেড়েও চলে যায়, আমি কখনও ফেলে যাব না।   
30 যীশু তাকে বললেন, আমি তোমাকে সত্য কথা বলছি, আজ রাতে দুই বার মোরগ ডাকার আগে, তুমি আমাকে তিনবার চিনতে পারবে না।   
31 পিতর খুব বেশি উত্সাহের সঙ্গে বলতে লাগলেন, যদি আপনার সঙ্গে মরতেও হয়, কোন ভাবে আপনাকে আমি চিনি না বলবো না। অপর শিষ্যরাও সেই রকম বলল।   
গেৎশিমানী বাগানে যীশুর মর্ম্মান্তিক দুঃখ। 
 
32 পরে তাঁরা গেৎশিমানী নামে এক জায়গায় এলেন; আর যীশু নিজের শিষ্যদের বললেন, আমি যতক্ষণ না প্রার্থনা করে আসি, তোমরা এখানে বসে থাক।   
33 পরে তিনি পিতর, যাকোব ও যোহনকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন এবং খুব দুঃখী হলেন ও ভয় পেতে লাগলেন।   
34 তিনি তাদেরকে বললেন, “আমার প্রাণ মরণ পর্যন্ত দুঃখার্ত্ত হয়েছে, তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জেগে থাক।”   
35 তিনি একটু আগে গিয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে এই প্রার্থনা করলেন, যদি সম্ভব হয় তবে যেন সেই দিন তাঁর কাছ থেকে চলে যায়।   
36 যীশু বললেন, আব্বা, পিতা তোমার কাছে তো সবই সম্ভব; এই দুঃখের পেয়ালা তুমি আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও; তবুও আমার ইচ্ছামত না হয়, কিন্তু তোমার ইচ্ছামত হয়।   
37 যীশু ফিরে এসে দেখলেন, শিষ্যরা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর তিনি পিতরকে বললেন, শিমোন তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ? এক ঘন্টাও কি তুমি জেগে থাকতে পারলে না?   
38 তোমরা জেগে থাক ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক, কিন্তু শরীর দুর্বল।   
39 আর তিনি আবার গিয়ে সেই কথা বলে প্রার্থনা করলেন।   
40 পরে তিনি আবার এসে দেখলেন, তাঁরা ঘুমিয়ে পড়েছেন কারণ তাঁদের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে পড়েছিল, তারা যীশুকে কি উত্তর দেবে, তা তারা বুঝতে পারল না।   
41 পরে তিনি তৃতীয় বার এসে তাদেরকে বললেন, এখনও কি তোমরা ঘুমাচ্ছ এবং বিশ্রাম করছ? যথেষ্ট হয়েছে; দিন এসেছ, দেখ, মনুষ্যপুত্রকে পাপীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।  
42 উঠ, আমরা যাই; এই দেখ, যে লোক আমাকে ধরিয়ে দেবে, সে কাছে এসেছে। যীশুকে শত্রুদের হাতে ধরিয়ে দেয়।   
যীশু বন্দী হলেন। 
 
43 আর তিনি যখন কথা বলছিলেন, সেই দিন যিহূদা, সেই বারো জনের একজন এল এবং তার সঙ্গে অনেক লোক তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে প্রধান যাজকদের, ব্যবস্থার শিক্ষকদের ও প্রাচীনদের কাছ থেকে এল।   
44 যে যীশুকে ধরিয়ে দিচ্ছিল, সে আগে থেকে তাদের এই চিহ্ন এর কথা বলেছিল, আমি যাকে চুম্বন করব, সেই ঐ লোক, তোমরা তাকে ধরে সাবধানে নিয়ে যাবে।   
45 সে তখনি তাঁর কাছে গিয়ে বলল, গুরু; এই বলে তাঁকে উত্সাহের সঙ্গে চুম্বন করলো।   
46 তখন তারা যীশুকে বেঁধে ধরে ফেলল।   
47 কিন্তু যারা পাশে দাঁড়িয়েছিল, তাদের ভেতরে এক ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে তরোয়াল বার করলেন এবং মহাযাজকের দাসকে আঘাত করে তার একটা কান কেটে ফেললেন।   
48 তখন যীশু তাদেরকে বললেন, “যেমন ডাকাতকে ধরা হয়, তেমনি কি তোমরা তরোয়াল ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছো?   
49 আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের মন্দিরে বসে উপদেশ দিয়েছি, তখন তো আমাকে ধরলে না। কিন্তু শাস্ত্রের কথা গুলি সফল হওয়ার জন্য এরকম ঘটালে।”   
50 তখন শিষ্যরা তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে গেল।   
51 আর, একজন যুবক উলঙ্গ চেহারায় কেবল একখানি চাদর পরে যীশুর পেছন পেছন যেতে লাগলো;   
52 তারা যুবকটিকে ধরলে, সে সেই চাদরটি ফেলে উলঙ্গ হয়ে পালাল।   
মহাযাজকের সম্মুখে যীশুর বিচার। 
 
53 পরে তারা যীশুকে মহাযাজকের কাছে নিয়ে গেল; তাঁর সঙ্গে প্রধান যাজকরা, প্রাচীনরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকেরা জড়ো হল।   
54 আর পিতর দূরে দূরে থেকে তাঁর পেছন পেছন ভিতরে, মহাযাজকের উঠোন পর্যন্ত গেলেন এবং পাহারাদারদের সঙ্গে বসে আগুন পোহাতে লাগলো।   
55 তখন প্রধান যাজকরা এবং সমস্ত মহাসভা যীশুকে বধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণ খুঁজতে লাগল,   
56 কিন্তু অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষী এসে জুটলেও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।   
57 পরে একজন দাঁড়িয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাসাক্ষ্য দিয়ে বলল,   
58 আমরা ওনাকে এই কথা বলতে শুনেছি, আমি এই হাতে তৈরী উপাসনার ঘর ভেঙে ফেলবো, আর তিন দিনের ভেতরে হাতে তৈরী নয় আর এক উপাসনার ঘর তৈরী করব।   
59 এতে ও তাদের সাক্ষ্য মিললো না।   
60 তখন মহাযাজক মাঝখানে দাঁড়িয়ে যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? তোমার বিরুদ্ধে এরা কিসব বলছে?   
61 কিন্তু তিনি চুপচাপ থাকলেন, কোন উত্তর দিলেন না। আবার মহাযাজক তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি সেই খ্রীষ্ট, সেই মহিমার পুত্র?   
62 যীশু বললেন, “আমি সেই; আর এখন থেকে তোমরা মনুষ্যপুত্রকে পরাক্রমের (সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের) ডান পাশে বসে থাকতে এবং আকাশের মেঘরথে আসতে দেখবে।”   
63 তখন মহাযাজক নিজের কাপড় ছিঁড়ে বললেন, আর সাক্ষীতে আমাদের কি দরকার?   
64 তোমরা ত ঈশ্বরনিন্দা শুনলে তোমাদের মতামত কি? তারা সবাই তাঁকে দোষী করে বলল, একে মেরে ফেলা উচিত।   
65 তখন কেউ কেউ তাঁর গায়ে থুথু দিতে লাগলো এবং তাঁর মুখ ঢেকে তাঁকে ঘুষি মারতে লাগলো, আর বলতে লাগলো, ঈশ্বরের বাক্য বল না? পরে পাহারাদাররা মারতে মারতে তাঁকে নিয়ে গেলো।   
পিতর যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেন। 
 
66 পিতর যখন নীচে উঠোনে ছিলেন, তখন মহাযাজকের এক দাসী এল;   
67 সে পিতরকে আগুন পোহাতে দেখে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমিও ত সেই নাসরতীয়ের, সেই যীশুর, সঙ্গে ছিলে।   
68 কিন্তু পিতর স্বীকার না করে বলল, তুমি যা বলছ, আমি তা জানিও না, বুঝিও না। পরে তিনি বেরিয়ে দরজার কাছে গেলেন, আর মোরগ ডেকে উঠল।   
69 কিন্তু দাসী তাঁকে দেখে, যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদেরকে বলতে লাগলো এই লোক তাদেরই একজন।   
70 তিনি আবার অস্বীকার করলেন। কিছুক্ষণ পরে যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, আবার তারা পিতরকে বলল, ঠিকই বলছি তুমি তাদের একজন, কারণ তুমি গালীলিয় লোক।   
71 পিতর নিজেকে অভিশাপের সঙ্গে এই শপথ নিয়ে বলতে লাগলেন, তোমরা যে লোকের কথা বলছো, তাকে আমি চিনি না।   
72 তখনি দ্বিতীয়বার মোরগ ডেকে উঠল; তাতে যীশু এই যে কথা বলেছিলেন, মোরগ দুই বার ডাকবার আগে তুমি তিনবার আমাকে অস্বীকার করবে,  সেই কথা পিতরের মনে পড়ল এবং তিনি সেই বিষয়ে মনে কোরে কাঁদতে লাগলেন।