যিহিস্কেল
গ্রন্থস্বত্ব
পুস্তকটি ভাববাদী এবং যাজক বূষির পুত্র যিহিষ্কেল দ্বারা রচিত বলে বিবেচনা করা হয়। তাহাকে যিরুশালেমের একটি যাজকীয় পরিবারে উত্থিত করা হয়েছিল এবং তিনি নির্বাসনের দিনের ইহুদীদের সঙ্গে বাবিলে থাকতেন। যিহিষ্কেলের যাজকীয় বংশ তার ভবিষ্যদ্বাণীসূচক সেবাকার্য়ের মাধ্যমে উজ্জ্বল হয়, তিনি প্রায়শই নিজে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে যেমন মন্দির, যাজকত্ব, প্রভুর প্রতাপ, এবং বলি সংক্রান্ত ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 593 থেকে 570 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
যিহিষ্কেল বাবিল থেকে লিখেছিলেন, কিন্তু তার ভাববাণী সমূহ ইস্রায়েল, মিশর, এবং বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে সম্পর্কিত ছিল।
গ্রাহক
বাবিলের নির্বাসনে এবং গৃহে থাকা ইস্রায়েলী এবং বাইবেলের পরবর্তী সমস্ত পাঠকগণ।
উদ্দেশ্য
যিহিষ্কেল তার প্রজন্মের প্রতি সেবাকার্য্য করেছিলেন যারা প্রচন্ডভাবে পাপে পূর্ণ ছিল এবং একেবারে আশাবিহীন ছিল। তার ভবিষ্যদ্বাণীসুচক সেবাকার্যের দ্বারা তিনি তাদেরকে তত্ক্ষনাৎ অনুতাপে ফিরিয়ে আনতে এবং দূরবর্তী ভবিষ্যতের ওপর ভরসা স্থাপন করতে প্রচেষ্টা করেছিলেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর মানবীয় দূতদের দ্বারা কার্য করেন, এমনকি ঈশ্বরের লোকেদের পরাজয় এবং হতাশার প্রয়োজন আছে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে সুনিশ্চিত করতে, ঈশ্বরের বাক্য কখনও ব্যর্থ হয় না, ঈশ্বর উপস্থিত আছেন এবং যে কোনো স্থানে তাঁর আরাধনা করা যেতে পারে। যিহিষ্কেল পুস্তকটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সেই সমস্ত অন্ধকারের দিন প্রভুর অন্বেষণ করতে যখন আমরা অনুভব করি আমরা হারিয়ে গেছি, আমাদের নিজেদের জীবনকে পরীক্ষা করতে, এবং এমন এক জনের সঙ্গে আমাদের মিলিত হতে যিনি প্রকৃত ঈশ্বর হচ্ছেন।
বিষয়
প্রভুর মহিমা
রূপরেখা
1. যিহিষ্কেলের আহ্বান — 1:1-3:27
2. যিরুশালেম, যিহুদা, এবং মন্দিরের বিরুদ্ধে ভাববাণী — 4:1-24:27
3. জাতিগণের বিরুদ্ধে ভাববাণী সমূহ — 25:1-32:32
4. ইস্রায়েলীদের সম্পর্কে ভাববাণী সমূহ — 33:1-39:29
5. পুন:স্থাপনের দর্শন — 40:1-48:35
1
জীবন্ত প্রাণী এবং সদাপ্রভুর মহিমা।
1 আমি ত্রিশ বছরের ছিলাম তখন চতুর্থ মাসের পঞ্চম দিনে, যখন আমি কবার নদীর ধারে বন্দিদের মধ্যে বাস করছিলাম, তখন স্বর্গ খুলে গেল, আর আমি ঈশ্বরের দর্শন পেলাম।
2 ঐ মাসের পঞ্চম দিনের এটা ছিল রাজা যিহোয়াখীনের বন্দিত্বের পঞ্চম বছর,
3 সদাপ্রভুর বাক্য শক্তিতে কলদীয়দের দেশে কবার নদীর ধারে বুষির ছেলে যিহিস্কেল যাজকের কাছে এল এবং সেখানে সদাপ্রভু তাঁর উপরে হাত রাখলেন।
4 তারপর আমি দেখলাম, সেখানে উত্তরদিক থেকে ঘূর্ণি বায়ু এল, একটা বড় মেঘ তার সঙ্গে আগুনের ঝলকানি ছিল এবং তার চারদিকে ও ভেতরে উজ্জ্বলতা ছিল মেঘের মধ্যে হলদেটে আগুন ছিল।
5 আর তার মধ্য থেকে চারটে জীবন্ত প্রাণীর মূর্ত্তি দেখা গেল। তাদের চেহারা মানুষের মত দেখতে ছিল,
6 কিন্তু তাদের প্রত্যেকের চারটে করে মুখ ও প্রত্যেকের চারটে করে ডানা ছিল।
7 তাদের পা ছিল সোজা, পায়ের পাতা বাছুরের খুরের মত ছিল, পিতলের মত চকচক করছিল।
8 তবুও তাদের ডানার নিচে চার পাশে মানুষের হাত ছিল, তাদের চারজনের প্রত্যেকেরই, একই রকম মুখ ও ডানা ছিল
9 তাদের ডানা অন্য প্রাণীর সঙ্গে স্পর্শ ছিল, তাদের যাওয়ার দিন তারা ফিরে তাকাতো না; তারা সামনে সোজা চলে যেতো।
10 তাদের মুখের আকার মানুষের মুখের মত ছিল; আর ডান দিকে চারটে সিংহের মুখ ছিল, আর বাদিকে চারটে গরুর মুখ ছিল, অবশেষে ঈগল পাখির মুখ ছিল।
11 তাদের মুখগুলো যেমন ছিল ও ডানাগুলো ওপর দিকে ছড়ানো, যাতে প্রত্যেকের এক জোড়া ডানা অন্য প্রাণীর ডানাকে স্পর্শ করে এবং ডানাগুলো তাদের শরীর ঢেকে রেখেছিল।
12 তারা প্রত্যেকে সামনের দিকে সোজা যেত; যে দিকে যেতে আত্মা তাদের নির্দেশ দিতেন সেই দিকে পিছনে না ফিরে তারা যেত।
13 জীবন্ত প্রাণীগুলো দেখতে আগুনের জলন্ত কয়লার মত বা মশালের মত; সেই আগুন ঐ প্রাণীদের মধ্যে চলাফেরা করত ও সেই আগুন থেকে বিদ্যুৎ চমকাত।
14 জীবন্ত প্রাণীরা খুব তাড়াতাড়ি যাওয়া আসা করত, তাদের দেখতে বিদ্যুতের মত।
15 তারপর আমি জীবন্ত প্রাণীদেরকে দেখলাম; জীবন্ত প্রাণীদের পাশে মাটির ওপর একটা চাকা ছিল।
16 চাকাগুলোর রূপ এবং গঠনপ্রণালী ছিল এইরকম: প্রত্যেক চাকা পান্নার মত, চারটে একই রকম ছিল এবং তাদের দেখতে একটা চাকার সঙ্গে বিভক্ত অন্য চাকার মতো।
17 যখন চাকা ঘুরত, তখন চার দিকের যে কোনো এক দিকে তারা যেত, গমনকালে ফিরত না।
18 চাকার বেড়ি অনুযায়ী সেগুলো উঁচু এবং ভয়ঙ্কর ছিল, কারণ সেগুলোর চারিদিকে চোখে ভর্তি ছিল।
19 যখনই জীবন্ত প্রাণীগুলো যেতো তাদের পাশে ঐ চাকাগুলোও যেতো; যখন জীবন্ত প্রাণীগুলো ভূমি থেকে উঠত, চাকাগুলো ও উঠত।
20 যে কোন জায়গায় আত্মা যেত, তারাও সেখানে যেত, যেখানে আত্মা যেতো, চাকাগুলোও তাদের পাশে উঠত, কারণ সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা ঐ চাকাগুলোর মধ্যে থাকতো।
21 যখন প্রাণীরা চলত, তখন চাকাগুলোও চলত এবং যখন সেই প্রাণীরা দাঁড়িয়ে পড়ত, চাকাগুলোও দাঁড়িয়ে পড়ত; যখন প্রাণীরা ভূমি থেকে উঠত, চাকাগুলোও তাদের পাশে উঠত, কারণ সেই জীবন্ত প্রাণীদের আত্মা ঐ চাকার মধ্যে ছিল।
22 আর সেই প্রাণীর মস্তকের উপরে এক বিস্তারিত গম্বুজ ছিল, এটা ভয়ঙ্কর ফটিকের আভার মত তাদের মাথার ওপরে ছড়িয়ে ছিল।
23 সেই গম্বুজের নিচে, প্রত্যেক প্রাণীর ডানা সোজা ছড়িয়ে ছিল এবং অন্য প্রাণীর ডানার সঙ্গে লেগে ছিল। প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর এক জোড়া ডানা তাদের ঢেকে রাখত, প্রত্যেকের এক জোড়া ডানা তাদের শরীর ঢেকে রাখত।
24 তারপর আমি তাদের ডানার শব্দ শুনলাম, যেন খুব জোরে বয়ে যাওয়া জলের শব্দের মত, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের আওয়াজের মত। যখনই তারা যেত ঝড়বৃষ্টির মত শব্দ হত। এটা ছিল সৈন্যদের আওয়াজের মত। যখনই তারা দাঁড়িয়ে থাকত তারা তাদের ডানা নীচু করে রাখত।
25 তাদের মাথার ওপরের গম্বুজ থেকে একটা আওয়াজ আসত যখনই তারা স্থির হয়ে দাঁড়াত এবং তাদের ডানা নীচু করত।
26 তাদের মাথার ওপরে গম্বুজে একটা সিংহাসন ছিল যেটা দেখতে নীলকান্তমনির মত এবং সিংহাসনের ওপরে এক জনকে দেখা যেত যাকে একটা মানুষের মত দেখতে ছিল।
27 আমি একটা আকার দেখলাম তাঁর কোমরের উপর থেকে চকচকে ধাতুর মত আগুনের আভা দেখলাম; তার কোমর থেকে নিচের দিকে এটা আগুনের মত এবং উজ্জ্বলতা তার চারদিকে ছিল
28 এটা দেখতে ধনুকের মত যা বৃষ্টির দিনের মেঘের মধ্যে দেখা যায় যেন চারদিকে উজ্জ্বল আলো সদাপ্রভুর মহিমার মত সামনে এল। যখনই আমি তা দেখলাম আমি আমার মুখে অনুভব করলাম এবং এক জনের কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।