মার্ক
গ্রন্থস্বত্ব
আদি মণ্ডলীর পিতাগণ সর্বসম্মতিক্রমে সম্মত হয়েছিলেন যে এই নথিটি যোহন মার্কের দ্বারা লিখিত হয়েছিল। নতুন নিয়মে যোহন মার্কের নাম দশ স্থানে উল্লিখিত হয়েছে (প্রেরিতের কার্য 12:12, 25; 13:5, 13; 15:37, 39; কলসীয় 4:10; 2 তিমথি 4:11; ফিলেমন 24; 1 পিতর 5:13)। এই উল্লেখ সমূহ সংকেত দেয় যে মার্ক বার্নবারের কুটুম্ব ছিলেন (কলসীয় 4:10)। মার্কের মাতার নাম ছিল মেরী, যিরুশালেমে যার ধনসম্পদ এবং প্রতিষ্ঠা ছিল এবং তাদের গৃহ আদি খ্রীষ্টানদের জন্য সভার স্থান ছিল। পৌলের প্রথম মিশনারী যাত্রায়, যোহন মার্ক পৌল এবং বার্নবাসের সঙ্গী ছিলেন (প্রেরিতের কার্য 12:25; 13:5)। বাইবেলীয় স্বাক্ষ্য এবং আদি মণ্ডলীর পিতাগণ পিতর এবং মার্কের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কে প্রদর্শন করে (1 পিতর 5:13)। তিনি আবারও পিতরের দোভাষী ছিলেন এবং সমস্ত সম্ভাবনার মধ্যে পিতরের প্রচার এবং প্রতক্ষ্যদর্শী স্বাক্ষ্য মার্কের সুসমাচারের প্রাথমিক উত্স হতে পারে।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 50 থেকে 60 খ্রিষ্টাব্দের সময়।
কাছাকাছি হবে। মণ্ডলীর পিতাদের (ইরেনাস, আলেক্সেন্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট এবং অন্যান্যরা) বিভিন্ন লেখা সমূহ সুনিশ্চিত করে যে মার্কের সুসমাচার হয়ত রোমে লেখা হয়েছে। আদি মণ্ডলীর সুত্র সমূহ ব্যক্ত করে যে সুসমাচারটি পিতরের মৃত্যুর পরে (খ্রীষ্টাব্দ 67-68) লেখা হয়েছিল।
গ্রাহক
স্বাক্ষ্য যা নথিকে প্রস্তুত করে তা প্রস্তাব দেয় যে মার্ক সাধারণভাবে অইহুদীর পাঠক এবং বিশেষ করে রোমীয় শ্রোতাদের জন্য লিখেছিলেন। এটা কারণ হতে পারে যে যীশুর বংশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না যেহেতু এটার অর্থ অইহুদীর জগতে খুব কম হতে পারে।
উদ্দেশ্য
মার্কের পাঠকগণ যারা বেশীরভাগ রোমীয় খ্রীষ্টান ছিলেন তারা নিজেদেরকে ভয়ঙ্কর তাড়নার মধ্যে দেখতে পেলেন, খ্রীষ্টাব্দ 67 তে রোমিও সম্রাট নিরোর শাসন কালে খ্রীষ্টানদের ওপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার করা হলো এবং বধ করা হলো। এই ধরণের দৃশ্যাবলীর মধ্যে মার্ক সুসমাচার লিখলেন খ্রীষ্টানদের উত্সাহিত করতে যারা এই ধরণের কঠিন দিনের র মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। কষ্টভোগী দাস রূপে যীশুর চিত্রায়ন (ইশাইয়া 53)।
বিষয়
যীশু–কষ্টভোগী দাস
রূপরেখা
1. প্রান্তরে সেবাকার্য়ের জন্য যীশুর প্রস্তুতি — 1:1-13
2. গালিলীর আশপাশে যীশুর সেবাকার্য্য — 1:14-8:30
3. যীশুর মিশন: কষ্টভোগ এবং মৃত্যু — 8:31-10:52
4. যিরুশালেমে যীশুর সেবাকার্য্য — 11:1-13:37
5. ক্রুশারোপনের বর্ণনা — 14:1-15:47
6. যীশুর পুনরুত্থান এবং আবির্ভাব — 16:1-20
1
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বাপ্তিষ্ম ও পরীক্ষা।
যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচারের শুরু; তিনি ঈশ্বরের পুত্র।
যিশাইয় ভাববাদীর বইতে যেমন লেখা আছে, দেখ, আমি নিজের দূতকে তোমার আগে পাঠাচ্ছি; সে তোমার পথ তৈরী করবে।
মরুপ্রান্তে এক জনের কন্ঠস্বর, সে ঘোষণা করছে, তোমরা প্রভুর পথ তৈরী কর, তাঁর রাজপথ সোজা কর,
সেইভাবে যোহন হাজির হলেন ও প্রান্তরে বাপ্তিষ্ম দিতে লাগলেন এবং পাপের ক্ষমা, মন পরিবর্তন এবং বাপ্তিষ্মের বিষয় প্রচার করতে লাগলেন।
তাতে সব যিহূদিয়া দেশ ও যিরূশালেমে বসবাসকারী সবাই বের হয়ে তাঁর কাছে যেতে লাগল; আর নিজ নিজ পাপ স্বীকার করে যর্দ্দন নদীতে তাঁর মাধ্যমে বাপ্তিষ্ম নিতে লাগলো।
সেই যোহন উটের লোমের কাপড় পরতেন, তাঁর কোমরে চামড়ার কোমরবন্ধন ছিল এবং তিনি পঙ্গপাল ও বনমধু খেতেন।
তিনি প্রচার করে বলতেন, যিনি আমার থেকে শক্তিমান, তিনি আমার পরে আসছেন; আমি নিচু হয়ে তাঁর জুতোর বাঁধন খোলার যোগ্যও না।
আমি তোমাদের জলে বাপ্তিষ্ম দিচ্ছি, কিন্তু তিনি তোমাদের পবিত্র আত্মায় বাপ্তিষ্ম দেবেন।
যীশুর অবগাহন ও প্রলোভন।
সেদিনের যীশু গালীলের নাসরৎ শহর থেকে এসে যোহনের কাছে যর্দ্দন নদীতে বাপ্তিষ্ম নিলেন।
10 আর সঙ্গে সঙ্গেই জলের মধ্য থেকে উঠবার দিন দেখলেন, আকাশ দুইভাগ হল এবং পবিত্র আত্মা পায়রার মত তাঁর ওপরে নেমে আসছেন।
11 আর স্বর্গ থেকে এই বাণী হল, তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমাতেই আমি সন্তুষ্ট।
12 আর সেই মুহূর্তে আত্মা তাঁকে প্রান্তরে পাঠিয়ে দিলেন, 13 সেই প্রান্তরে তিনি চল্লিশ দিন থেকে শয়তানের মাধ্যমে পরীক্ষিত হলেন; আর তিনি বন্য পশুদের সঙ্গে থাকলেন এবং স্বর্গীয় দূতগণ তাঁর সেবাযত্ন করতেন।
প্রভু যীশুর প্রকাশ্যে কাজের আরম্ভ।
14 আর যোহনকে ধরে জেলখানায় ঢোকানোর পর যীশু গালীলে এসে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করে বলতে লাগলেন,
15  “দিন সম্পূর্ণ হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে; তোমরা পাপ থেকে মন ফেরাও ও সুসমাচারে বিশ্বাস কর।”
16 পরে গালীল সমুদ্রের পার দিয়ে যেতে যেতে যীশু দেখলেন, শিমোন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয় সমুদ্রে জাল ফেলছেন, কারণ তাঁরা পেশায় জেলে ছিলেন।
17  যীশু তাঁদেরকে বললেন, “আমার সঙ্গে এসো,” আমি তোমাদের মানুষ ধরা শেখাব।
18 আর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা জাল ফেলে দিয়ে তাঁর সঙ্গে গেলেন।
19 পরে তিনি কিছু আগে গিয়ে সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও তাঁর ভাই যোহনকে দেখতে পেলেন; তাঁরাও নৌকাতে ছিলেন, জাল সরাই করছিলেন।
20 তিনি তখনই তাঁদেরকে ডাকলেন, তাতে তাঁরা তাদের বাবা সিবদিয়কে বেতনজীবি কর্মচারীদের সঙ্গে নৌকা ছেড়ে যীশুর সঙ্গে চলে গেলেন।
যীশু মন্দ আত্মাকে তাড়িয়ে দিলেন।
21 পরে তাঁরা কফরনাহূমে গেলেন আর তখনই তিনি বিশ্রামবারে সমাজঘরে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।
22 লোকরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য্য হল; কারণ তিনি ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির মত তাদের শিক্ষা দিতেন, ধর্মশিক্ষকের মতো নয়।
23 তখন তাদের সমাজঘরে একজন লোক ছিল, তাকে মন্দ আত্মায় পেয়েছিল; সে চেঁচিয়ে বলল,
24 “হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি? আপনি কি আমাদেরকে ধ্বংস করতে আসলেন? আমি জানি আপনি কে; আপনি ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি।”
25 তখন যীশু সেই মন্দ আত্মাকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হও।”
26 তাতে সেই মন্দ আত্মা তাকে মুচড়ে ধরল এবং খুব জোরে চিৎকার করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল।
27 এতে সবাই আশ্চর্য্য হলো, এমনকি, তারা একে অপরকে বলতে লাগলো, “এটা কি? এ কেমন নতুন উপদেশ! উনি ক্ষমতার সঙ্গে মন্দ আত্মাদেরকেও আদেশ দেন, আর তারা ওনার আদেশ মানে।”
28 তাঁর কথা খুব তাড়াতাড়ি গালীল প্রদেশের সবদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
যীশু অনেককে সুস্থ করলেন।
29 পরে সমাজঘর থেকে বের হয়ে তখনই তাঁরা যাকোব ও যোহনের সঙ্গে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়িতে গেলেন।
30 তখন শিমোনের শ্বাশুড়ীর জ্বর হয়েছে বলে শুয়ে ছিলেন; আর তাঁরা দেরী না করে তার কথা যীশুকে বললেন;
31 তখন তিনি কাছে গিয়ে তার হাত ধরে তাকে ওঠালেন। তখন তার জ্বর ছেড়ে গেল, আর যীশু তাঁদের সেবাযত্ন করতে লাগলেন।
32 পরে সন্ধ্যার দিন, সূর্য্য ডুবে যাওয়ার পর মানুষেরা সব অসুস্থ লোককে এবং ভূতগ্রস্তদের তাঁর কাছে আনল।
33 আর শহরের সমস্ত লোক দরজার কাছে জড়ো হল।
34 তাতে তিনি নানা প্রকার রোগে অসুস্থ অনেক লোককে সুস্থ করলেন এবং অনেক ভূত ছাড়ালেন আর তিনি ভূতদের কথা বলতে দিলেন না, কারণ তারা তাঁকে চিনত যে, তিনি কে।
যীশুর নির্জন স্থানে প্রার্থনা।
35 খুব সকালে যখন অন্ধকার ছিল, তিনি উঠে বাইরে গেলেন এবং নির্জন জায়গায় গিয়ে সেখানে প্রার্থনা করলেন।
36 শিমোন ও তাঁর সঙ্গীরা যারা যীশুর সঙ্গে ছিল তাঁকে খুঁজতে গেলেন।
37 তাঁকে পেয়ে তারা বললেন, “সবাই আপনার খোঁজ করছে।”
38 তিনি তাঁদেরকে বললেন, “চল, আমরা অন্য জায়গায় যাই, কাছাকাছি কোনো গ্রামে যাই, আমি সেই সব জায়গায় প্রচার করব, কারণ সেইজন্যই আমি এসেছি।”
39 পরে তিনি গালীল দেশের সব জায়গায় লোকদের সমাজঘরে গিয়ে প্রচার করলেন ও ভূত ছাড়াতে লাগলেন।
40 একজন কুষ্ঠ রুগী এসে তাঁর কাছে অনুরোধ করে ও হাঁটু গেড়ে বলল, যদি আপনার ইচ্ছা হয়, আমাকে শুদ্ধ করতে পারেন।
একজন কুষ্ঠরোগী।
41 তিনি করুণার সাথে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন, তিনি বললেন, “আমার ইচ্ছা, তুমি শুদ্ধ হয়ে যাও।”
42 “সেই মুহূর্তে কুষ্ঠরোগ তাকে ছেড়ে গেল, সে শুদ্ধ হল।”
43 তিনি তাকে কঠোর আদেশ দিয়ে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিলেন,
44  যীশু তাকে বললেন, “দেখ, এই কথা কাউকেও কিছু বলো না; কিন্তু যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও এবং লোকদের কাছে তোমার বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য মোশির দেওয়া আদেশ অনুযায়ী নৈবেদ্য উৎসর্গ কর, তাদের কাছে সাক্ষ্য হওয়ার জন্য যে তুমি সুস্থ হয়েছ।”
45 কিন্তু সে বাইরে গিয়ে সে কথা এমন অধিক ভাবে প্রচার করতে ও চারদিকে বলতে লাগল যে, যীশু আর স্বাধীন ভাবে কোন শহরে ঢুকতে পারলেন না, কিন্তু তাঁকে বাইরে নির্জন জায়গায় থাকতে হলো; আর লোকেরা সব দিক থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল।