যাকোব
গ্রন্থস্বত্ব
গ্রন্থকার হচ্ছেন যাকোব (1:1), যিরুশালেম মণ্ডলীর এক বৃহৎ নেতা এবং যীশু খ্রীষ্টের ভ্রাতা। যীশু খ্রীষ্টের বিভিন্ন ভ্রাতাদের মধ্যে যাকোব ছিলেন অন্যতম, যেহেতু মথি 13:55 এর সূচীতে তিনি সব থেকে উপরে আছেন সেইহেতু সম্ভবত: তিনি বয়জৈষ্ঠ ছিলেন। প্রথমত তিনি যীশুর প্রতি বিশ্বাস করেন নি এবং এমনকি তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং তার সেবাকার্যকে ভুল বুঝেছিলেন। পরবর্তী দিনের তিনি মণ্ডলীর মধ্যে অত্যন্ত বিশিষ্ট হয়েছিলেন। তিনি বাছাই করা ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন যাকে যীশু তার পুনরুত্থানের পরে দেখা দিয়েছিলেন (1 করিন্থীয় 15:7)।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 40 থেকে 50 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
50 খ্রিষ্টাব্দতে যিরূশালেম পরিষদের পূর্বে এবং 70 খ্রীষ্টাব্দতে মন্দির ধ্বংসের পূর্বে।
গ্রাহক
পত্রটির গ্রাহক গণ খুব সম্ভবতঃ যিহুদী বিশ্বাসীরা ছিলেন যারা যিহুদা এবং শমরিয় জুড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। তথাপি, “জাতিগণের মধ্যে বিচ্ছিন্ন 12 উপজাতির” প্রতি যাকোবের প্রারম্ভিক অভিবাদনের ওপরে ভিত্তি করে বলা যায় এই ক্ষেত্রগুলো যাকোবের প্রকৃত শ্রোতাগণের পক্ষে প্রবল সম্ভাবনাময় হচ্ছে।
উদ্দেশ্য
যাকোবের অতি মহত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে যাকোবের 1:2-4 পদে দেখা যায়। তার প্রারম্ভিক বাক্য সমূহের মধ্যে, যাকোব তার পাঠকদের এটাকে খাঁটি আনন্দ বলে বিবেচনা করতে বলেছেন, আমার ভ্রাতা এবং ভগ্নীগণ, কখনও তোমরা বিভিন্ন প্রকারের পরীক্ষায় পড় না কেন, তোমরা জানো যে তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা ঐকান্তিকতা উত্পন্ন করে, এই অধ্যায় ইঙ্গিত দেয় যাকোবের শোতৃবৃন্দ নানান প্রকারের পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছিল। যাকোব তার শ্রোতাদের ঐশ্বরিক প্রজ্ঞাকে অনুসরণ করতে বলেছেন (1:5) যাতে করে পরীক্ষার মধ্যেও তাদের কাছে আনন্দ থাকে। যাকোবের শ্রোতাদের মধ্যে কতিপয় লোক ছিল যারা বিশ্বাসের থেকে অনেক দুরে বিপথগামী হয়েছিল। এবং যাকোব তাদের জগতের বন্ধু হতে সাবধান করলেন (4:4), যাকোব বিশ্বাসীদের নিজেদের বিনম্র হওয়ার নির্দেশ দিলেন যাতে করে ঈশ্বর [তাদের] উঁচুতে তুলবেন। তিনি শিক্ষা দিলেন ঈশ্বরের সামনে বিনম্রতা প্রজ্ঞার একটি পথ হচ্ছে।
বিষয়
প্রকৃত বিশ্বাস
রূপরেখা
1. প্রকৃত ধর্মের ওপরে যাকোবের নির্দেশাবলী — 1:1-27
2. মহৎ কার্য্যের দ্বারা প্রকৃত বিশ্বাসকে প্রদর্শন করা যায় — 2:1-3:12
3. ঈশ্বরের থেকে সত্য জ্ঞান আসে — 3:13-5:20
1
ঈশ্বরও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দাস যাকোব, নানা দেশে ছিন্নভিন্ন বারো বংশকে এই চিঠি লিখছি। মঙ্গল হোক।
পরীক্ষা এবং প্রলোভন।
হে আমার ভাইয়েরা, তোমরা যখন নানা রকম পরীক্ষায় পড়, তখন এই সব কিছুকে আনন্দের বিষয় বলে মনে করো; কারণ জেনে রাখো যে, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষার সফলতা সহ্য উত্পন্ন করে। আর সেই সহ্য যেন নিজের কাজকে সম্পূর্ণ করে, যেন তোমরা পরিপক্ক ও সম্পূর্ণ হও, কোন বিষয়ে যেন তোমাদের অভাব না থাকে। যদি তোমাদের কারো জ্ঞানের অভাব হয়, তবে সে যেন ঈশ্বরের কাছে চায়; তিনি সবাই কে উদারতার সঙ্গে দিয়ে থাকেন, তিরস্কার করেন না; ঈশ্বর তাকে দেবেন। কিন্তু সে যেন সন্দেহ না করে কিন্তু বিশ্বাসের সঙ্গে চায়; কারণ যে সন্দেহ করে, সে ঝড়ো হাওয়ায় বয়ে আসা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো চঞ্চল। সেই ব্যক্তি যে প্রভুর কাছে কিছু পাবে এমন আশা না করুক; কারণ সে দুমনা লোক, নিজের সব কাজেই চঞ্চল। দরিদ্র ভাই তার উচ্চ পদের জন্য গর্ব বোধ করুক। 10 আর যে ধনী সে তার দিন তার জন্য গর্ব বোধ করুক, কারণ সে বুনো ফুলের মতোই ঝরে পড়ে যাবে। 11 যেমন, সূর্য্য যখন প্রখর তাপের সঙ্গে ওঠে তখন, গাছ শুকিয়ে যায় ও তার ফুল ঝরে পড়ে এবং তার রূপের লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়; তেমনি ধনী ব্যক্তিও তার সমস্ত কাজের মধ্যে দিয়ে ফুলের মতোই ঝরে পড়বে। 12 ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষায় সফল হলে পর সে জীবনমুকুট পাবে, তা প্রভু তাদেরকেই দিতে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা তাকে প্রেম করেন। 13 প্রলোভনের দিনের কেউ না বলুক, ঈশ্বর আমাকে প্রলোভিত করছেন; কারণ মন্দ বিষয় দিয়ে ঈশ্বরকে প্রলোভিত করা যায় না, আর তিনি কাউকেই প্রলোভিত করেন না; 14 কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের নিজের মন্দ কামনার মাধ্যমে আকৃষ্ট ও প্ররোচিত হয়ে প্রলোভিত হয়। 15 পরে কামনা গর্ভবতী হয়ে পাপের জন্ম দেয় এবং পাপ পরিপক্ক হয়ে মৃত্যুকে জন্ম দেয়। 16 হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা, ভ্রান্ত হয়ো না। 17 সমস্ত উত্তম উপহার এবং সমস্ত সিদ্ধ উপহার স্বর্গ থেকে আসে, সেই আলোর পিতার কাছ থেকে নেমে আসে। ছায়া যেমন একস্থান থেকে আর একস্থানে পরিবর্তন হয় তেমনি তাঁর পরিবর্তন হয় না। 18 ঈশ্বর তাঁর নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সত্যের বাক্য দিয়ে আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন, যেন আমরা তাঁর সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে প্রথম ফলের মতো হই।
শোনা এবং কাজ করা।
19 হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা এটা জানো। কিন্তু তোমাদের প্রত্যেকে অবশ্যই কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাক, কম কথা বলো, খুব তাড়াতাড়ি রেগে যেও না, 20 কারণ যখন কোনো ব্যক্তি রেগে যায় সে ঈশ্বরের ইচ্ছা অর্থাৎ ধার্ম্মিকতা অনুযায়ী কাজ করে না। 21 অতএব, তোমরা সমস্ত অপবিত্রতা ও মন্দতা ত্যাগ করে, নম্র ভাবে সেই বাক্য যা তোমাদের মধ্যে রোপণ করা হয়েছে তা গ্রহণ কর, যা তোমাদের প্রাণের উদ্ধার করতে সক্ষম। 22 আর বাক্যর কার্য্যকারী হও, নিজেদের ঠকিয়ে শুধু বাক্যের শ্রোতা হয়ো না। 23 কারণ যে শুধু বাক্য শোনে, কিন্তু সেইমতো কাজ না করে, সে এমন ব্যক্তির তুল্য, যে আয়নায় নিজের স্বাভাবিক মুখ দেখে; 24 কারণ সে নিজেকে আয়নায় দেখে, চলে গেল, আর সে কেমন লোক, তা তখনই ভুলে গেল। 25 কিন্তু যে কেউ মনোযোগের সঙ্গে স্বাধীনতার নিখুঁত ব্যবস্থায় দৃষ্টিপাত করে ও তাতে মনযোগ দেয় এবং ভুলে যাওয়ার জন্য শ্রোতা না হয়ে সেই বাক্য অনুযায়ী কাজ করে, সে নিজের কাজে ধন্য হবে। 26 যে ব্যক্তি নিজেকে ধার্মিক বলে মনে করে, আর নিজের জিভকে বল্গা দিয়ে বশে না রাখে, কিন্তু নিজের হৃদয়কে ঠকায়, তার ধার্মিকতার কোনো মূল্য নেই। 27 দুঃখের দিনের অনাথদের ও বিধবাদের দেখাশোনা করা এবং জগত থেকে নিজেকে ত্রূটিহীন ভাবে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে পবিত্র ও শুদ্ধ ধর্ম।