1 করিন্থীয়
গ্রন্থস্বত্ব
পৌলকে এই পুস্তকটির রচয়িতা রূপে স্বীকৃত করা হয় (1 করিন্থীয় 1:1-2); এটা আবারও পৌলের পত্র রূপেও পরিচিত হচ্ছে। অন্য কোনো দিনের অথবা যখন তিনি ইফিষিয়তে ছিলেন–পৌল করিন্থীয়দের একটি পত্র লিখলেন যা 1 করিন্থীয়র পূর্ববর্তী ছিল (5:10-11) এবং করিন্থীয়রা পত্রটিকে ভুল বুঝলো এবং দুর্ভাগ্যক্রমে ওই পত্রটির অস্তিত্ব আর নেই। “পূর্ববর্তী পত্রটির” (যেমন এটাকে বলা হয়) বিষয়বস্তু সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞাত, 1 করিন্থীয়কে পত্রটির প্রতিক্রিয়া রূপে বিবেচনা করা হয় যাকে পৌল করিন্থীয় মণ্ডলী থেকে প্রাপ্ত করেছিলেন, যা তারা সম্ভবত: পূর্ববর্তী পত্রের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ লিখেছিল।
রচনার সময় এবং স্থান
আনুমাণিক 55 থেকে 56 খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়।
পত্রটি ইফিষিয় থেকে লেখা হয়েছিল (1 করিন্থীয় 16:8)
গ্রাহক
1 করিন্থীয়র ইচ্ছুক পাঠকগণ “করিন্থের মধ্যে ঈশ্বরের মণ্ডলী” এর সদস্য ছিলেন (1 করিন্থীয় 1:2), যদিও পৌল আবারও তার অভীষ্ট পাঠকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন “সেই সকলকে যারা সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রভু যীশুর নাম কোরে সর্বত্র আহ্বান করে” (1:2)।
উদ্দেশ্য
পৌল বিভিন্ন সুত্র সমূহ থেকে করিন্থের মণ্ডলীর বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সূচনা পেয়েছিলেন। এই পত্রটি রচনার তার উদ্দেশ্য ছিল মণ্ডলীকে বির্দেশ দেওয়া এবং পুন:স্থাপন করা এটার দুর্বলতার ক্ষেত্রে, অন্যায় অভ্যাসগুলো সংশোধন করা যেমন বিভাজন (1 করিন্থীয় 1:10-4:21), পুনরুত্থান সম্পর্কে মিথ্যা শিক্ষা (1 করিন্থীয় 15), অনৈতিকতা (1 করিন্থীয় 5, 6:12-20), এবং প্রভুর ভোজের অমর্যাদা (1 করিন্থীয় 11:17-34)। করিন্থ মণ্ডলী বরদান প্রাপ্ত ছিল (1:4-7), কিন্তু অপরিপক্ক ও অনাধ্যাত্মিক (3:1-4) ছিল, তাই পৌল একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল দিলেন যে এটার মাঝে কিভাবে মণ্ডলীর দ্বারা পাপের সমস্যার বিহিত করা উচিত। সম্পর্ক সংক্রান্ত বিভাজন এবং সমস্ত প্রকারের অনৈতিকতার দিকে অন্ধ দৃষ্টি না রেখে, তিনি জীবন্ত সমস্যাগুলোর সমাধান করলেন।
বিষয়
বিশ্বাসীদের আচরণ
রূপরেখা
1. ভূমিকা — 1:1-9
2. করিন্থের মণ্ডলীতে বিভাজন — 1:10-4:21
3. নৈতিক এবং ন্যায়শাস্ত্র সম্বন্ধীয় বিবাদ — 5:1-6:20
4. বিবাহের নীতিমালা — 7:1-40
5. প্রেরিত সংক্রান্ত স্বাধীনতা — 8:1-11:1
6. আরাধনার ওপরে শিক্ষা — 11:2-34
7. আত্মিক বরদান সমূহ — 12:1-14:40
8. পুনরুত্থানের ওপরে শিক্ষা — 15:1-16:24
1
পৌল, ঈশ্বরের ইচ্ছায় খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত হওয়ার জন্য যাকে ডাকা হয়েছে এবং ভাই সোস্থিনি করিন্থ শহরে অবস্থিত ঈশ্বরের মণ্ডলীকে, খ্রীষ্ট যীশু যাদের পবিত্র করেছেন ও যাদের পবিত্র হওয়ার জন্য ডেকেছেন তাঁদের এবং যারা সমস্ত জায়গায় আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ডাকে, তাঁদের সবাইকে এই চিঠি লিখছি; তিনি তাঁদের এবং আমাদের প্রভু। আমাদের পিতা ঈশ্বর এবং প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তোমাদের অনুগ্রহ ও শান্তি দান করুন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন।
ঈশ্বরের যে অনুগ্রহ খ্রীষ্ট যীশুতে তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি তোমাদের বিষয়ে সবদিন ঈশ্বরের ধন্যবাদ করছি; কারণ তাঁর দ্বারা তোমরা সব বিষয়ে, সমস্ত কথাবার্তায় ও সমস্ত জ্ঞানে ধনবান (সমৃদ্ধ) হয়েছ। তিনি তোমাদের সমস্ত জ্ঞানে ধনবান করেছে, এই ভাবে খ্রীষ্টের সাক্ষ্য তোমাদের মধ্যে সুনিশ্চিত (দৃঢ়) করা হয়েছে। এই জন্য তোমরা কোন আত্মিক দানে পিছিয়ে পড়নি; আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের অপেক্ষা করছ; আর তিনি তোমাদেরকে শেষ পর্যন্ত স্থির রাখবেন এবং আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দিনের যেন নির্দোষ থাক। ঈশ্বর বিশ্বস্ত, যাঁর মাধ্যমে তোমরা তাঁর পুত্র, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সহভাগীতার জন্য ডাকা হয়েছে।
মণ্ডলীতে দলাদলি।
10 কিন্তু হে ভাই এবং বোনেরা, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে আমি তোমাদেরকে অনুরোধ করে বলি, তোমরা সবাই একই কথা বল, তোমাদের মধ্যে দলাদলি না হোক, কিন্তু যেন তোমাদের এক মন হয় ও বিচারে একমত হও। 11 কারণ, হে আমার ভাইয়েরা, আমি ক্লোয়ীর পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে তোমাদের বিষয়ে খবর পেয়েছি যে, তোমাদের মধ্যে বিবাদ (দলাদলি) আছে। 12 আমি এই কথা বলছি যে, তোমরা সবাই বলে থাক, “আমি পৌলের,” আর আমি “আপল্লোর,” আর আমি “কৈফার,” আর আমি “খ্রীষ্টের।” 13 খ্রীষ্ট কি ভাগ হয়েছেন? পৌল কি তোমাদের জন্য ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছে? অথবা তোমরা কি পৌলের নামে বাপ্তিষ্ম নিয়েছ? 14 ঈশ্বরের ধন্যবাদ করি যে, আমি তোমাদের মধ্যে ক্রীষ্প ও গায়কে (গায়ুশ) ছাড়া আর কাউকেই বাপ্তিষ্ম দিই নি, 15 যেন কেউ না বলে যে, তোমরা আমার নামে বাপ্তিষ্ম নিয়েছ। 16 আর স্তিফানের পরিবারের লোকদের বাপ্তিষ্ম দিয়েছি, আর কাউকে যে বাপ্তিষ্ম দিয়েছি, তা জানি না। 17 কারণ খ্রীষ্ট আমাকে বাপ্তিষ্ম দেওয়ার জন্য পাঠান নি, কিন্তু সুসমাচার প্রচার করার জন্য; তা জ্ঞানের বাক্য নয়, যেন খ্রীষ্টের ক্রুশীয় মৃত্যু বিফলে না যায়।
খ্রীষ্টের ক্রুশের সুসমাচারের গুরুত্ব।
18 কারণ সেই খ্রীষ্টের ক্রুশের কথা, যারা ধ্বংস হচ্ছে, তাদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু পরিত্রান পাচ্ছি যে আমরা আমাদের কাছে তা ঈশ্বরের মহা শক্তি। 19 কারণ লেখা আছে, “আমি জ্ঞানীদের জ্ঞান নষ্ট করব, বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি ব্যর্থ করব।” 20 জ্ঞানীলোক কোথায়? ব্যবস্থার শিক্ষকরা কোথায়? এই যুগের যুক্তিবাদীরা (যারা তর্ক করে) কোথায়? ঈশ্বর কি জগতের জ্ঞানকে মূর্খতায় পরিণত করেননি? 21 কারণ, ঈশ্বরের জ্ঞানে যখন জগত তার নিজের জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরকে জানতে পারে নি, তখন প্রচারের মূর্খতার মাধ্যমে বিশ্বাসকারীদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে ঈশ্বরের সুবাসনা হল। 22 কারণ ইহূদিরা আশ্চর্য্য চিহ্ন চায় এবং গ্রীকেরা জ্ঞানের খোঁজ করে; 23 কিন্তু আমারা ক্রুশে হত খ্রীষ্টকে প্রচার করি; তিনি ইহূদিদের কাছে বাধার মতো ও অইহূদিদের (গ্রীকদের) কাছে মূর্খতার মতো, 24 কিন্তু যিহূদী ও গ্রীক, যাদের ডাকা হয়েছে তাদের সবার কাছে খ্রীষ্ট ঈশ্বরেরই মহাশক্তি ও ঈশ্বরেরই জ্ঞান। 25 কারণ ঈশ্বরের যে মূর্খতা, তা মানুষের জ্ঞানের থেকে বেশি জ্ঞানী এবং ঈশ্বরের যে দুর্বলতা, তা মানুষের শক্তির থেকে বেশি শক্তিশালী। 26 কারণ, হে ভাই এবং বোনেরা, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতু মাংসের অনুসারে জ্ঞানী অনেক নেই, ক্ষমতাশালী অনেক নেই, উচ্চপদস্থও অনেক নেই; 27 কিন্তু ঈশ্বর জগতের সমস্ত মূর্খ বিষয়কে বেছে নিলেন, যেন জ্ঞানীদের লজ্জা দেন এবং ঈশ্বর জগতের সমস্ত দুর্বল বিষয় মনোনীত করলেন, যেন শক্তিশালী বিষয়গুলিকে লজ্জা দেন। 28 এবং জগতের যা যা নীচ ও যা যা তুচ্ছ, যা যা কিছুই নয়, সেই সমস্ত ঈশ্বর মনোনীত করলেন, যেন, যা যা আছে, সে সমস্ত কিছুকে মূল্যহীন করেন; 29 তিনি এই জন্যই করেছেন যেন কেউ ঈশ্বরের সামনে অহঙ্কার প্রকাশ করতে না পারে। 30 কারণ ঈশ্বরের জন্যই তোমরা সেই খ্রীষ্ট যীশুতে আছ, যিনি ঈশ্বরের থেকে আমাদের জন্য জ্ঞান, ধার্ম্মিকতা ও পবিত্রতা এবং প্রাণের মুক্তিদাতা হয়েছেন, 31 যেমন লেখা আছে, “যে ব্যক্তি গর্ব করে, সে প্রভুতেই গর্ব করুক।”